Latest News

ধুমকেতুর গঠন নিয়ে নতুন তথ্য

ধূমকেতুতে বিস্ময়করভাবে কিছু সাধারণ জৈব অণুর প্রলেপ এবং গ্যাসের পরিবর্তনশীল স্তর খুঁজে পেয়েছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ইএসএ) মহাকাশযান রোসেটা। ধূমকেতু প্রদক্ষিণকারী মহাকাশযানের এই আবিষ্কারের ফলে প্রাচীন মহাজাগতিক কাঠামোটির গঠন ও উৎস নিয়ে নতুন প্রশ্নের উদে৶ক হয়েছে।
রোসেটার বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, সিক্সটিসেভেনপি নামের ধূমকেতুটির বরফপূর্ণ উপাদানগুলো কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, সেই রহস্য তাঁরা সম্ভবত ভেদ করতে পেরেছেন। ধূমকেতুটির পৃষ্ঠতলের নতুন নতুন ছবি দেখে মনে হচ্ছে, সেখানকার পিণ্ড আকৃতির জিনিসগুলোই কাঠামোটির মূল গাঠনিক উপাদান।
এই ব্যাখ্যা সত্যি হলে তা নিঃসন্দেহে এক বড় আবিষ্কার বলে গণ্য হবে। এই গবেষণার প্রতিবেদন সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। ১০ বছরব্যাপী যাত্রা শেষে রোসেটা গত আগস্টে সিক্সটিসেভেনপি/চুরিয়ুমভ-গেরাসিমেঙ্কো নামের ধূমকেতুতে পৌঁছায়। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার লক্ষ্যে রোসেটা থেকে ফিলে নামের একটি ছোট নভোযান গত নভেম্বরে ওই ধূমকেতুর পৃষ্ঠে অবতরণ করে।
প্রায় ৪৬ লাখ বছর আগে সৌরজগতের গ্রহগুলো সৃষ্টির পর ধূমকেতুগুলো উচ্ছিষ্ট হিসেবে রয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়। রোসেটার অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে ধূমকেতু নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে সৌরজগৎ সৃষ্টির প্রাথমিক দিনগুলো নিয়ে অনুসন্ধান চালানো। ফিলের গবেষণাকাজ আপাতত স্থগিত রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সাতটি নিবন্ধে সিক্সটিসেভেনপিতে রোসেটার প্রথম দুই মাসের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, ধূমকেতুটির ভর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) ভরের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি গুণ বেশি। ওই ধূমকেতুতে রয়েছে বালিয়াড়ি ও ঢেউয়ের চিহ্ন। আরও আছে বরফ এবং বিপুল পরিমাণ হাইড্রোকার্বন।
ধূমকেতুটির পৃষ্ঠে আরও কার্বনসমৃদ্ধ উপাদান পাওয়া যাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন। আর সেখানে সাধারণ হাইড্রোকার্বনের অস্তিত্ব পাওয়ার ফলে সেগুলোর উৎস নিয়ে নতুন কৌতূহল তৈরি হয়েছে। জৈব উপাদানগুলো কীভাবে সৃষ্টি হলো এবং সৌরজগতের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ল, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমে তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে, কালের বিবর্তনে ধূমকেতুটি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। সিক্সটিসেভেনপি এখন সূর্যের দিকে ধাবমান।
ধূমকেতুটির শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন গ্যাসে ইতিমধ্যে নানাবিধ বৈচিত্র্য খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। রোসেটার বিজ্ঞানী এবং যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক মার্থা হ্যাসিং বলেন, বিভিন্ন ঋতুতে রোসেটার পরিবর্তন সম্পর্কেও পরে জানা যাবে। আর এই গবেষণার মাধ্যমে ধূমকেতুর গঠন ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে নতুন ধারণা অর্জন করা সম্ভব হবে।
একই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী স্টিফেন ফুসেলিয়ের বলেন, আগে তাঁরা শিখেছেন, ধূমকেতুগুলো মূলত পানির বরফে তৈরি। কিন্তু এই ধূমকেতুর সামনের অংশে পানির বাষ্পের চেয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতিই বেশি দেখা যাচ্ছে।
এখন এটা স্পষ্ট যে ধূমকেতুটি কেবল বরফের বড় একটি পিণ্ড নয়, এটির আরও অনেক বেশি জটিল। কারণ, এতে রয়েছে অনেক ধূলিকণা এবং পাথুরে উপাদান। ধূমকেতুটি থেকে নিঃসৃত ধূলি ও গ্যাসের অনুপাত (৪ অনুপাত ১) স্পষ্ট এবং সেখানকার দুর্গম খাড়া কাঠামোগুলো বেশ শক্ত উপাদানে তৈরি।
সব মিলিয়ে, ধূমকেতুটির ভেতরের অংশ বিজ্ঞানীদের আগের ধারণার চেয়ে বেশি নরম ও সচ্ছিদ্র বলে মনে হচ্ছে। সিক্সটিসেভেনপি সূর্যের দিকে এগিয়ে যাবে এবং রোসেটাও এটিকে অনুসরণ করতে থাকবে। হাঁসের মতো গঠনের ধূমকেতুটি সূর্যের কাছাকাছি গিয়ে গতিপথ পাল্টাবে। এটি আগামী ১৩ আগস্ট সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি (১৮ কোটি ৬০ লাখ কিলোমিটার দূরে) অবস্থানে থাকবে।
সূত্র: রয়টার্স ও বিবিসি

No comments:

Post a Comment

হৃদয়ে বাংলা Designed by Templateism.com Copyright © 2014

Theme images by Bim. Powered by Blogger.